অথবা, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত অস্থায়ী সংবিধানের প্রকৃতি লিখ।
উত্তরঃ ভূমিকা: বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। তিনি দেশ পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করা। এ লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত অস্থায়ী সংবিধানের বৈশিষ্ট্য: নিচে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত অস্থায়ী সংবিধান আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো:
১. অস্থায়ী সংবিধান আদেশ বলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।
২. এ আদেশ বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ ১৯৭২ নামে অভিহিত হবে।
৩. জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির গণতন্ত্র থাকবে।
৪. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রিসভা থাকবে।
৫. প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর কার্যসম্পাদন করবেন।
৬. রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনপ্রাপ্ত আস্থাভাজন একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযোগদান করবেন; মন্ত্রিবর্গ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
৭. ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদ গঠিত হবে। তবে অন্য কোনোভাবে বা কোনো আইনে অযোগ্য ঘোষিত সদস্যগণ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন না। গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণয়নের পূর্বে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে মন্ত্রিপরিষদ নাগরিকদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করবেন।
৮. একজন প্রধান বিচারপতি এবং সময়ে সময়ে নিযুক্ত অন্যান্য বিচারপতিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে একটি হাইর্কোট প্রতিষ্ঠা করা হবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত অস্থায়ী সংবিধান আদেশ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনতা যে সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছিল তারই প্রতিচ্ছবি ছিল এ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ।